অর্থসহ নৈতিক গুণাবলি বিষয়ক দুটি হাদিস (পাঠ ১২)

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা - কুরআন ও হাদিস শিক্ষা | NCTB BOOK
241

নীতি ও নৈতিকতা মানবজীবনের জন্য অপরিহার্য। নীতি হলো কথায় ও কাজে সৎ, সুন্দর ও মার্জিত হওয়া। কোনোরূপ অন্যায়, অত্যাচার ও অশালীন কাজকর্ম না করা। নীতিহীন মানুষ পশুর সমান। যে ব্যক্তি চলাফেরা ও কথাবার্তায় নীতির অনুসরণ করে না, সমাজের সকলে তাকে ঘৃণা করে। অন্যদিকে নীতিবান মানুষকে সবাই ভালোবাসে। সকলে তাকে শ্রদ্ধা করে, সম্মান করে। আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (স.) ছিলেন সর্বোত্তম নীতির অধিকারী। তিনি সর্বদা নীতি ও আদর্শের অনুশীলন করতেন। উত্তম চরিত্র ও নীতির জন্য শত্রুরাও তাঁর প্রশংসা করত।
হাদিসসমূহে আমরা দেখতে পাই মহানবি (স.) উম্মতগণকেও নীতি-নৈতিকতা শিক্ষা দিয়েছেন। নিম্নে দুটি নীতিমূলক হাদিস উল্লেখ করা হলো। আমরা এগুলো মুখস্থ করব, এর অর্থ জানব। আমরা এ নীতিমূলক হাদিস অনুযায়ী আমল করব।

হাদিস ১

لَا دِينَ لِمَنْ لَّا عَهْدَ لَهُ

অর্থ: 'যে ব্যক্তি অঙ্গীকার পালন করে না তার কোনো দীন নেই অর্থাৎ সে প্রকৃত দীনদার নয়।' (ওয়াবুল ইমান)
শিক্ষা
অঙ্গীকার পালন করা নীতি-নৈতিকতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমরা নানা সময় নানারূপ ওয়াদা ও অঙ্গীকার করে থাকি। এসব অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। কেননা ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করলে মানুষের মধ্যে অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়। পরস্পর মারামারি ও অশান্তি ঘটে। সুতরাং সামাজিক শান্তির জন্য অঙ্গীকার রক্ষা করা আবশ্যক। ইসলামে অঙ্গীকার রক্ষা করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। মহানবি (স.) নিজে সর্বদা অঙ্গীকার রক্ষা করে চলতেন। অঙ্গীকার ভঙ্গ করা প্রকৃত দীনদার ব্যক্তির লক্ষণ নয়। অর্থাৎ যে ব্যক্তি পরিপূর্ণ দীনদার সে সবসময় প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে চলবে। সে কখনো অঙ্গীকার ভঙ্গ করবে না। অতএব, আমরা কখনো অঙ্গীকার ভঙ্গ করব না। বরং জীবনের সকল প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে চেষ্টা করব। তাহলে আমরা প্রকৃত দীনদার হতে পারব।

হাদিস ২

وَإِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الْفُجُوْرِ وَإِنَّ الْفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ (بخاری و مسلم)

অর্থ: 'তোমরা মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা মিথ্যা (মানুষকে) পাপের দিকে নিয়ে যায়। আর পাপ জাহান্নাম পর্যন্ত পৌঁছে দেয়।' (বুখারি ও মুসলিম)
শিক্ষা
মিথ্যা হলো সত্যের বিপরীত। প্রকৃত কথা, কাজ, বিষয়, অবস্থা ইত্যাদি গোপন করাকে মিথ্যা বলা হয়। মিথ্যাবাদীকে কেউ বিশ্বাস করে না। কেউ তাকে ভালোবাসে না। মিথ্যাবাদীকে কেউ সাহায্য-সহযোগিতাও করে না। মহানবি (স.) ছিলেন চরম সত্যবাদী। তিনি জীবনে কোনোদিন মিথ্যা কথা বলেননি। তিনি মানুষকে সত্য কথা বলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং মানুষকে মিথ্যা ত্যাগ করতে বলেছেন। কেননা মিথ্যা হলো সকল পাপের মূল। মিথ্যা মানুষকে পাপের দিকে নিয়ে যায়। কোনো পাপ কাজ করে মিথ্যা বললে অনেক সময় তা ধরা যায় না। ফলে মানুষ পুনরায় পাপ করতে থাকে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা সবকিছু দেখেন ও জানেন। তার নিকট মিথ্যা বলা যায় না। বরং দুনিয়ার সব পাপের তিনি হিসাব রাখেন। হাশরের ময়দানে তিনি এসবের বিচার করবেন।
যেহেতু মিথ্যা মানুষকে পাপের দিকে নিয়ে যায়। আর পাপের শাস্তি হলো জাহান্নাম। সুতরাং আমরা মিথ্যা বলা পরিহার করব। সর্বদা সত্য কথা বলব। তাহলে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা পাব।

কাজ : শিক্ষার্থীরা দুই দলে ভাগ হয়ে যাবে। একদল নৈতিক গুণাবলি বিষয়ক হাদিস দুটি অর্থসহ মুখস্থ বলবে। অন্যদল হাদিস দুটির শিক্ষা সম্পর্কে বলবে। আবার প্রথম দল উক্ত হাদিসের শিক্ষা এবং দ্বিতীয় দল হাদিস দুটি অর্থসহ মুখস্থ বলবে।
Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...